# কোটি টাকার হিসাবে গড়মিল
# রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে বাবু ও তার স্ত্রী নুপুর একাধিকবার সভাপতি
# প্রধান শিক্ষক জসীম উদ্দীনকে আইন বর্হিভূক্ত ভাবে বরখাস্ত
# ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আইরিনের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ
# স্কুলের সম্পত্তিতে ইমাম ভবন
কে এম শামছুদ্দোহাঃ বরিশাল নগরীর প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী আছমত আলী খান (এ,কে) ইনস্টিটিউশন। প্রতিষ্ঠানটির যেমন নিজস্ব আর্থিক সচ্ছলতা রয়েছে। তেমনি রয়েছে পুরানো অনেক সুনাম সুখ্যাতি। কিন্তু হঠাৎ কালের বিবর্তনে আর্থিক সচ্ছলতাই কাল হয়ে দাঁড়িয়ে ঐতিহ্য হারিয়ে ধ্বংসের পথে বসেছে একসময়ের সুনামের আলো ছড়ানো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছমত আলী খান (এ কে) ইনস্টিটিউশন। প্রতিষ্ঠানটিতে নিজস্ব কিছু অর্থ আয়ের উৎস রয়েছে। যা দ্বারা প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক ভবন নির্মাণ, শিক্ষার্থীদের পাঠদানের সুবিধার্থে খন্ডকালীন শিক্ষকদের বেতন ভাতা ও স্কুলের সার্বিক উন্নয়নসহ প্রয়োজনীয় আনুষাঙ্গিক খরচ মিটানো হয়ে থাকে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটিতে হঠাৎ কালো হাতের থাবা পরে ফ্যাসিস্টদের দোসর বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ’র। সাদিক আব্দুল্লাহ স্কুলটির নির্দিষ্ট অর্থ ও সম্পত্তির সন্ধান পেয়ে তা লুটপাটের টার্গেট নিয়ে স্কুল পরিচালনা পরিষদের কমিটিতে নিজের অনুসারীদের অনুপ্রবেশের সিদ্ধান্ত নেয়। এর সূত্রমতে এডহক কমিটিতে সভাপতি হিসেবে তার আস্থাভাজন লোক বসিয়ে দেওয়া হয়। যার দ্বারা পরবর্তী লুটপাটের এজেন্ডা বাস্তবায়নের একটি অংশ সাদেকের ব্যাংক হিসেবেও জমা হয় বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। ২০২০ সালের ২৭ জুলাই সাদিকের হস্তক্ষেপে এ,কে ইনস্টিটিউশনের এডহক কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন সাবেক মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ’র একান্ত সহচর বরিশাল মহানগর আ’লীগের যুগ্ম আহবায়ক হাসান মাহমুদ বাবু ওরফে গ্যাস্ট্রিক বাবু। গ্যাস্ট্রিক বাবু সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর ২০২০ সালের ১৭ডিসেম্বর পরিকল্পিতভাবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ জসীম উদ্দীনকে মিথ্যা অপবাদে নাটকীয় মামলা সাজিয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে। যা ছিলো সম্পূর্ণ বে-আইনি। কেননা প্রধান শিক্ষক এইচ. এম. জসীম উদ্দিন কে বেসরকারি শিক্ষক চাকুরিবিধি ১৯৭৯ এর ১২ ও ১৩ ধারা উপেক্ষা করে সম্পূর্ণ আইন বর্হিভূক্ত ভাবে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের উদ্দ্যেশে সাময়িক বহিষ্কার করে। পরবর্তীতে তাকে স্কুুল ও বাসভবন থেকে জোরপূর্বক বের করে দেয়া হয়। বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন সংখ্যা: শিম/মা: ১১/১০-১১/২০০৯/১৭১ এ বলা আছে শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা একমাত্র পূর্ণাঙ্গ ম্যানেজিং কমিটির, এ ব্যাপারে এডহক কমিটির সভাপতি আইনী কোনো তোয়াক্কাই করেনি। এখানেই তিনি ক্ষ্যান্ত হননি, তিনি রাজনৈতিক প্রভাববিস্তার করে প্রধান শিক্ষক এইচ.এম. জসীম উদ্দিনের নামে বিধিবর্হিভূত একটি অর্থ তছরুপ ফৌজদারি মামলা দায়ের করে। সরকারি ভাতা গ্রহণভুক্ত কোনো কর্মচারির বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা করতে হলে ওই প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রাধীন অধিদপ্তরের অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু কোনো অনুমতি না নিয়ে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রভাবে শুধু অর্থ আত্মসাৎ এর ফন্দি ফিকির করতেই প্রধান শিক্ষক জসীম উদ্দীনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তাকে কয়েক বছর ধরে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য করে। এ সবকিছুর পিছন থেকে পরিকল্পনাকারীর ভুমিকায় ছিলেন সাবেক মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ । প্রধান শিক্ষক এইচ. এম. জসীম উদ্দিন-কে স্কুল থেকে বের করে যে সহকারী শিক্ষক মোসা. আইরীন পারভিনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের আসনে বসানো হয়েছে সেই আইরিন পারভিনের বাবা বিএম স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান বামঘরানার রাজনীতির সাথে যুক্ত হওয়ায় সুবাদে সাবেক এমপি বরিশাল জেলা আ’লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ’র ঘনিষ্ঠজন। সেই সুবাদে আইরিনের সাথে কালিবাড়ী রোডের সেরনিয়াবাত ভবনে ছিলো যাতায়াত-নিবিড় সম্পর্ক। একদিকে তৎকালীন মেয়র সাদিক অপর দিকে এডহক কমিটির সভাপতিতে কখনও হাসান মাহমুদ বাবু আবার কখনও বাবুর স্ত্রী নুপুর নাহার এ যেন আইরিনের কাছে আলাদিনের চেরাগ। অপরদিকে উভয়ের মধ্যে লুটপাটের মনোবাসনা। অনুসন্ধানের তথ্য মতে প্রতিষ্ঠানটির উপর দীর্ঘদিনের লুটপাটের উপর ধারণ করা লালিত মানো বাসনা বাস্তবায়নে সাদিক,বাবু, আইরিন সম্মিলিত রূপরেখা বাস্তবায়ন করেছে। এর সম্মুখ সারিতে ছিলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আইরিন পারভিন। একজন প্রক্তন ছাত্র অভিভাবক ও স্থানীয় বাসিন্দা এ প্রতিবেদককে বলেন, সাবেক মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ ও বিদ্যালয়ের সাবেক এডহক কমিটির সভাপতি গ্যাস্ট্রিক বাবু বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আইরিন পারভিনের যোগসাজশে বিদ্যালয়ের ছাত্রদের পড়াশুনা বাদ দিয়ে বিদ্যালয়ের নানা উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ডের নামে প্রায় ১ কোটি টাকা আত্মসাত করেছে। আইরিন নিজে বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশে শ্রেনীকক্ষের আলো-বাতাস বন্ধ করে ১০-১২ টি স্টল নির্মাণ করে গ্রহীতাদের কাছ থেকে প্রয় ১২ লাখ টাকা উৎকোচ নেয়া, বঙ্গবন্ধুর মুুর্যাল নির্মানের ৩ লাখ, শিক্ষক মিলায়তনের শৌচাগার নির্মাণে ২ লাখ, শিক্ষক মিলনায়তন আধুনিকরণের নামে ৫ লাখ, বঙ্গবন্ধু কর্নার নির্মানে ৩ লাখ, প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষ সুু-সজ্জিত ও বর্ধিতকরণে ৫ লাখ, শিক্ষার্থীদের সাইকেল স্টান্ড নির্মানে ১ লাখ, বিদ্যালয়ের মার্কেটের দোতালার ২টি ব্যাংক ও ১টি রেষ্টুরেন্ট ভাড়া দিয়ে উৎকোচ নিয়েছে ৭ লাখ, বিদ্যালয়ের শতবর্ষী পুরান আসবাবপত্র বিক্রি করে ৫ লাখ, সহকারি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে সাবেক সহকারি প্রধান শিক্ষককে উপদেষ্টা নিয়োগ করে ৭ লাখ টাকা অপচয় করেছে।মোট হিসেব করলে দেখা যায় ২৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আইরিন। এছাড়াও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে গেলেও ১৭-১৮ জন নিজের পছন্দসই খন্ডকালীন শিক্ষক ও কর্মচারি নিয়োগের নামে ৭৭ লাখ ৭৬ হাজার টাকার খরচ ভাউচার করেছেন। বিদ্যালয়ে তহবিল থেকে নির্মানকাজসহ বিভিন্ন উন্নয়নের নামে ১ কোটি ৪ লাখ ৯৬ হাজার টাকা ব্যয় করেছে । যা অনেকটাই কাগজে কলমে অপ্রয়োজনীয় বিল ভাউচার। এর সঠিক তদন্ত হলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে। খোঁজখবর নিয়ে দেখা গেছে সাদিকের নির্দেশে স্কুল সংলগ্ন ১১টি স্টল নামমাত্র অ্যাডভান্সে সাদিক ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের লোকজনের মধ্যে ভাগাভাগি হয়।এর মধ্যে এডহক কমিটির সভাপতি হাসান মাহমুদ বাবুর নামে ৩টি, বাবুর শালার নামে ১টি, সাবেক মেয়র সাদেক আব্দুল্লাহর এপিএস সুমন সেরনিয়াবাত এর নামে ৩টি, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এর নামে ১টি, সাবেক সহকারী প্রধান শিক্ষক বশির আহমেদ এর নামে ১টি, অফিস সহকারী জামাল হোসেন এর নামে ১টি বরাদ্দ দেয়া হয়। এছাড়াও সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ নগরীর কেন্দ্রীয় ঈদগা সংলগ্ন এ কে ইনস্টিটিউশনের সম্পত্তিতিতে তার মায়ের নামে সাহানারা আব্দুল্লাহ ইমাম ভবন নির্মানের জন্য স্কুলের সম্পত্তি রেজিস্ট্রি করে দিতে প্রধান শিক্ষক জসীম উদ্দীনকে ততকালীন সময় চাপপ্রয়োগ করে। কিন্তু জসীম উদ্দীন এতে অপারগতা প্রকাশ করলে সেই থেকেই প্রধান শিক্ষক জসীম উদ্দীনের উপর বেকে বসে সাদিক। সাদিকের জোরপূর্বক দখল করা প্রায় ২৫ শতাংশ স্কুলের সম্পত্তির উপর ইমাম ভবন নামের ভবনটি নির্মাণাধীন। যা নিয়ে ইতিমধ্যে জট খুলতে শুরু করেছে। অভিযোগের ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আইরিন পারভিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে জানান, আমি আত্মসাৎ করিনি। যাহা কিছু হয়েছে সভাপতির নির্দেশেই হয়েছে। সবকিছুর বিল ভাউচার আছে। সভাপতির বাহিরে আমাদের কিছু করার ছিলোনা। বরিশাল মহানগর ইমাম সমিতির সাধারন সম্পাদক মাওঃ শামসুল আলম বলেন, আমাদেরকে সাবেক মেয়রের মায়ের নামে ইমাম ভবন করে দিতে আগ্রহ প্রকাশ করছে এজন্য আমরা ইমামরা সম্মিতি জানাইছি। জবর দখল করে সম্পত্তির উপর ইমামদের জন্য এভাবে ভবন করবে তা কিছুটা সন্দেহ হলেও তখন বিশ্বাস করতে পারিনি। এখোন আমরা ওই ভবনের কাছেও কেউ যাইনা। সবমিলিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এটি রক্ষাকরে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে দিতে দরকার দ্রুত সংশ্লিষ্ট সকলের সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করা।