কে এম শামছুদ্দোহাঃ মাথা নত করে আপোষ করেননি মজিবর রহমান সরোয়ার। দেশের রাজনীতির মাঠে সুদিন-দুর্দিন, উত্তাপ নিরুত্তাপ, ক্ষমতা-ক্ষমতার বাহিরে থাকা, প্রচলিত নিয়মে পরিণত হয়েছে! কেউ কেউ আবার ক্ষমতাসীনদের চাপের মুখে বিরোধী দল থেকে দলছুট হয়ে ক্ষমতাসীনদের দলে কিংবা তাদের আশীর্বাদ পুষ্ট দলে ভিড়ছেন। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের হালচাল অনেকটা এমনটাই দেখা যাচ্ছে। যা নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্তে ক্ষমতার সিঁড়ি ধরে রাখতে খুব জোরে সোরেই আলোচনায় আসে। ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এবারে তা বহুমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিকদের ভাষায় এবারের নির্বাচনকে সামনে রেখে ১/১১আদলে কিছু কিংস পার্টি তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে বিএনপিকে ভাঙতে সরকারী দলের পক্ষ থেকে নানা তৎপরতা রয়েছে বলে বহুদিন থেকেই বিএনপি গণমাধ্যমের সম্মুখে অভিযোগ করে আসছে। বিএনপি’র কিছু সুবিধাভোগী নেতাদের ভোল পাল্টানো দেখে অভিযোগগুলোর সত্যতা ও আচ করা যায়। যা সর্বশেষ বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর এর নাটকীয় জামিন এবং একদিনের মাথায় নৌকা মার্কার প্রার্থী হওয়ায় বুঝতে কারো বাকি থাকে নি। তবে শাজাহান ওমর এর বাড়ি দক্ষিণাঞ্চলে হাওয়ায় তাকে নিয়ে যেমন দলের ভিতর সমালোচনার ঝড় বইছে তেমনি দলের আরেক পরীক্ষিত নেতা কেন্দ্রীয় বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব বারবার নির্বাচিত সাবেক সাংসদ ও মেয়র আলহাজ্ব এডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ারকে নিয়ে চলছে প্রশংসার বুলি। কেউ কেউ আবার দলের এই সংকটময় মুহূর্তে বরিশালে তার অনুপস্থিতি হারে হারে উপলব্ধি করছে। তবে কারাগার থেকেও দলের কর্মী সমর্থকদের মনোবল অটুট রাখতে স্বজনদের মাধ্যমে সমর্থকদের মাঝে তার বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন বলে সূত্র জানায়। সরোয়ারের এ বার্তা পেয়ে গত ২৮ অক্টোবর বিএনপি’র মহাসমাবেশ পরবর্তী বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলে ব্যর্থ আন্দোলন! নেতাকর্মীদের আত্মগোপনে থাকা থেকে কিছুটা হলেও আলোর মুখ দেখছে। বরিশাল নগরীসহ বিভিন্ন জায়গায় মজিবর রহমান সারোয়ারের সমর্থকদের চলমান আন্দোলনে মিছিল পিকেটিং করে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে দেখা গেছে। মজিবর রহমান সারোয়ার আজ পর্যন্ত দলের কোন সংকটময় মুহূর্তে ক্ষমতাসীন দল কিংবা কোন অন্যায় আবদারের সাথে আপোষ করেননি। এজন্যই বিগত ১/১১ এর অনির্বাচিত সরকারের সময় বিসিসি মেয়র থাকা কালীন তাকে জেল জুলুমের শিকার হতে হয়েছিল। পরবর্তীতে ২০১৩/১৪ এর সরকারবিরোধী আন্দোলন সগ্রাম, ২০১৮ এর নির্বাচন পরবর্তী ২০২৩ সালের ২ নভেম্বর গভীর রাতে ঢাকার এক আত্মীয়র বাসা থেকে র্যাবের হাতে আটকের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি মাঠে থেকে নেতৃত্ব অব্যাহত রেখেছেন। সরোয়ার ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশে হামলা কালে দলের কর্মী-সমর্থকদের রক্ষা করতে গিয়ে নিজে গুলিবিদ্ধ হন। ২৮ তারিখের পল্টন থানার একটি মামলায় ৪ নাম্বার আসামী করা হয় সরোয়ারকে । পরবর্তীতে ২ নভেম্বর ঢাকা থেকে গভীর রাতে তাকে র্যাব আটক করে থানায় হস্তান্তর করে।
তবে মজিবর রহমান সরোয়ার কারাগারে থাকলেও একটি মহল থেকে তাকে এবং তার পরিবারকে দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে জোড় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে নাসিমা সারোয়ার প্রতিবেদকে জানান। তবে সরোয়ার পরিবার সাব জানিয়ে দিয়েছেন খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের নেতৃত্বের বাহিরে অন্য কোনো দলের কিংবা অন্যায়ের সাথে মজিবর রহমান সরোয়ার জীবিত থাকতে কখনো আপোষ করবেন না। এদিকে বরিশালে মজিবর রহমান সরোয়ারের উপস্থিতিতে আন্দোলন সংগ্রামে বিগত ২০১৩/১৪ তথা ২০১৮ সাল পরবর্তী যে তৎপরতা লক্ষ করা গেছে তা এখোন আর চোঁখে পড়ছেনা। এজন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মী সমার্থকরা মনে করেন বরিশালে বিএনপির বর্তমান কমিটি গুলোতে শাহজাহান ওমরের মতোন কিছু নেতা ঘাপটি মেরে বসে আছে। এজন্য কর্মী সমার্থকদের আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে থাকার ইচ্ছা থাকলেও স্থানীয় নেতাদের অসহযোগিতার কারণে তারা তা পারছেনা। নেতাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের দেখা পায়না কর্মী-সমর্থকরা।
কর্মীদের অভিযোগ, সমধারার মামলায় বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবুল হোসেন খানরা দ্রুত জামিনে বের হলেও মজিবর রহমান সরোয়ার জামিন পাচ্ছেনা। শিরিন-আবুলরা সরকারের সাথে নাটকীয় ভাবে আতাত করছে। অভিভাবকহীন কর্মীরা জামিন পাওয়া, না পাওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন সরকারের সাথে আপোষ করা, আর সরকারের বিরোধী শিবিরে অবস্থান নেয়াকে। বরিশাল মহানগর বিএনপি নিয়েও আহবায়ক মনিরুজ্জামান ফারুকসহ অনেকের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ। কথা হয়েছিলো বিএনপি কর্মী মিজান এর সাথে, তিনি বরিশাল নগরীতে ছোট্ট একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন। কিন্তু গত ২৮ অক্টোবরের পরে তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে তার দাবী। বহু চেষ্টা করেও দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো নেতার সাক্ষাত পাচ্ছেনা মিজান। মিজান ক্ষোভের সাথে বলেন, সরোয়ার ভাই যখোন মহানগর বিএনপির দায়িত্বে ছিলেন তখোন তার ডাকে হাজার হাজার নেতাকর্মী রাস্তার নেমে আসতো। বরিশালে সর্বাত্মক হরতাল অবরোধ পালিত হতো। তখনকার সময়ে আরো বেশী পুলিশি ও সরকারদলের দমন নিপীড়ন ছিল। তখোন কোন বাধাই সরোয়ার ভাইকে দমাতে পারে নাই। এখোন বরিশালে আন্দোলন করার মতোন কোনো নেতা নাই। নেতারা পিঠ বাচাতে ব্যাস্ত। যারা আন্দোলন করতে চায় তাদেরকে কৌশলে দল এবং আন্দোলনের মাঠ থেকে সরিয়ে রেখেছে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদপদবীতে থাকা নেতারা। মিজানের কথা গুলোর বাস্তবতার যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে অসংখ্য কর্মী সমর্থকদের মুখ থেকে একই ধরনের কথার সুর শুনতে পাই। তবে নেতারা বলছেন তারা আন্দোলনে কৌশলী ভূমিকায় আছেন। ( সংবাদটি প্রকাশিত হয় ৩ ডিসেম্বর ২০২৩ইং) আজ পুনরায় প্রকাশিত হলো ।